নারী, ধূমপায়ী এবং ৪৫ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি
আরও বেশি৷ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেসব নারী
‘ইস্ট্রোজেন' আছে এমন জন্মনিরোধক পিল খাচ্ছেন তাদের
ক্ষেত্রে ‘অরা মাইগ্রেন' এর দুর্ভোগ আরও বেশি এবং
স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেশি৷
প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ২০ ভাগেরই মাইগ্রেন সমস্যা রয়েছে,
যাদের তিন চতুর্থাংশই নারী৷ অনেক
ক্ষেত্রেই তারা বমিভাব ও আলো
এবং শব্দের বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত সংবেদনশীলতার কথা বলে
থাকেন৷
এমন
রোগীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশই মাথা ব্যথার সময় বা মাথা
ব্যথার আগে তথাকথিত ‘অরা'য় ভোগেন৷ অর্থাৎ তারা এক ধরণের অদ্ভুত
আলো দেখতে পাওয়া,
অস্বস্তিকর গন্ধ পাওয়া কিংবা চিন্তার
অসংলগ্নতায় ভোগেন৷
এর
আগে মাইগ্রেনের সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি নিয়ে কথা হলেও
বিভিন্ন ধরণের মাইগ্রেনের বিষয়ে আলাদাভাবে দৃষ্টিপাত করা
হয়নি কিংবা মাইগ্রেনের সঙ্গে স্ট্রোকের ঠিক কী ধরণের
সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়নি৷
ব্রিগহামের বিজ্ঞানী মারকুস শার্কস এবং বোস্টনের উইমেন্স
হসপিটালের গবেষকরা এই বিষয়ে গবেষণা করেন এবং অজানা
অধ্যায়টিতে আলোকপাতের চেষ্টা করেন৷ তাঁরা অরা মাইগ্রেনের
কারণে রক্তসঞ্চালন কমে যাওয়ার সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক
খুঁজে বের করেন৷
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের ওই প্রতিবেদনে হার্ভার্ড
মেডিকেল স্কুলের গবেষক এলিজাবেথ লোডার পরামর্শ দিয়েছেন,
যেসব নারী এ সমস্যায় ভুগছেন তাদের উচিৎ
অবিলম্বে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া এবং ইস্ট্রোজেন নেই এমন
জন্মনিরোধক পিল খাওয়া৷
অবশ্য তিনি একথা বলেন যে,
মাইগ্রেনে ভোগা রোগীদের স্ট্রোকের
সাধারণ ঝুঁকির হার মারাত্মক না
হওয়ায় অরা মাইগ্রেনে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হওয়া নিয়ে
উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
মাইগ্রেন ও
দুশ্চিন্তা
-
ডা. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী
মাইগ্রেন হল এক ধরনের
দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা যা যুবক বয়সের ছেলে ও মেয়ে
নির্বিশেষে সবারই হতে পারে।
এ
রোগটা সাধারণত বংশ পরম্পরায় হয়ে থাকে।
তাই কারও দীর্ঘমেয়াদে মাথাব্যথা থাকলে
পরিবারের অন্য সদস্যের মাথাব্যথার খোঁজ নেয়া উচিত।
রোগের কারণ
উল্লেখযোগ্য কারণ
হল-
১.
পারিবারিক মাথাব্যথার ইতিহাস যা বংশ
পরম্পরায় হয়ে থাকে।
বাবা,
মা,
ভাইবোন নির্বিশেষে পরিবারের কারও না
কারও এ রোগের
আক্রান্তের
ইতিহাস থাকে।
তবে
পরিবারের সদস্যদের মাথাব্যথা থাকা ছাড়াও মাথাব্যথা দেখা
দিতে পারে।
২.
দুশ্চিন্তা
:
সাধারণত কোনও কারণে অতিরিক্ত চিন্তা করলে
হূদযন্ত্রের পালপিটেশন,
সকালে কয়েকবার পাতলা পায়খানার বেগ দেখা দেয়া
ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে মাথাব্যথাও দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে ২০-৩০
বয়সের বিবাহিত/অবিবাহিত
মহিলাদের মাঝে এ রোগ বেশি দেখা
দেয়।
৩.
মহিলাদের ঋতুর সঙ্গেও মাথাব্যথা দেখা দিতে
পারে।
৪.
পনির
জাতীয় খাবারে যেখানে টাইরামিন জাতীয় পদার্থ বেশি থাকে।
এটি বেশি খেলে মাইগ্রেনের
মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
কেন মাথাব্যথা হয়
মাইগ্রেন রোগে সাধারণত
মস্তিস্কের শিরা প্রথমে সংকুচিত হয় এবং পরে প্রসারিত হয়।
শিরা সংকোচনের সময় রক্ত
সরবরাহ কমে গিয়ে স্নায়ুর কার্যক্ষমতা কিছুক্ষণের জন্য কমে
যেতে পারে।
তবে শিরা
সংকোচন খুব অল্পক্ষণের জন্য হয়ে থাকে।
শিরা প্রসারণের জন্য মাথাব্যথা হয়।
এ
মাথাব্যথা মাথার কোনও একদিক আবার একভাগ আক্রান্ত
হতে পারে।
কখনও কখনও মাথাব্যথা মাথার উপরিভাগে
সীমাবদ্ধ থাকে।
কখনও কখনও এটি মুখমণ্ডল পর্যনত্ম ছড়াতে পারে।
অনেক সময় মাথাব্যথার
সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ যেমন মাথা ঘোরানো বমি বমি ভাব চোখে
আলোর ঝলকানি ইত্যাদি দেখা
যায়।
প্রকারভেদ
সাধারণত তিন ধরনের মাইগ্রেন
দেখা যায়।
যেমন-
১.
ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন
:
এ
ধরনের মাইগ্রেনে মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ
যেমন বমি ভাব অথবা বমি
হওয়া,
চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি থাকে।
এ রোগটা ১০ ভাগ লোকের
মাঝে পাওয়া যায়।
২.
সাধারণ মাইগ্রেন
:
এ
ধরনের মাইগ্রেনে শুধু মাথার উপরিভাগে ব্যথা দেখা যায়।
অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমি
হওয়া বা বমির ভাব হওয়া ইত্যাদি থাকে না।
এ ধরনের মাইগ্রেন আমাদের বেশি হয়ে থাকে।
প্রায় ৫০ ভাগ এ রোগের দ্বারা আক্রা
ন্ত
হয়।
৩.
জটিল
মাইগ্রেন
:
এই ধরনের মাইগ্রেনে
মস্তিষ্কের
কাণ্ডের রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে বিভিন্ন
উপসর্গ
(মাথা
ঘোরা,
কথায়
জড়তা,
চোখ দিয়ে দুইটা জিনিস দেখা ইত্যাদি দেখা
যায়।
রোগ নির্ণয়
সাধারণত ক্লিনিকেল উপসর্গ
দ্বারাই মাইগ্রেন রোগ নির্ণয় করা যায়।
তবে অন্যান্য
মস্তিষ্কের
অসুখ যেমন ব্রেইন টিউমার,
ব্রেইনের শিরা,
উপশিরার বিকৃত অবস্থা ইত্যাদি আছে কিনা-
এজন্য
ব্রেইনের বিভিন্ন ইমেজিং করা উচিত।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসা খুবই
কার্যকরী।
তাই নিয়মিত ওষুধ সেবনে উপসর্গ মুক্ত অবস্থা
(মাথাব্যথাহীন
অবস্থা)
বজায়
থাকে।
চিকিৎসাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১.
যখনই
মাথাব্যথা দেখা দেবে তখনই মাথাব্যথা নিবারণের ওষুধ যেমন
প্যারাসিটামল,
ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক,
ইনডোমেথাসিন ইত্যাদি কয়েক দিন ব্যবহার করলে
মাথাব্যথা নিবারণ হয়।
খ.
তবে
দীর্ঘমেয়াদে মাথাব্যথাহীন থাকার জন্য ওষুধের সাহায্যে
প্রতিষেধক ওষুধ ব্যবহার করলে
সুস্থ জীবনযাপন করা যায়।
প্রতিষেধক ওষুধ হিসেবে পিজোটিফেন,
এমিট্রিপটাইলিন,
প্রোপানলল ইত্যাদি ওষুধ আলাদাভাবে অথবা একত্রে
দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে দীর্ঘদিন রোগমুক্ত থাকা যায়।
তবে হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করলে
উপসর্গ আবার দেখা দিয়ে মারাত্মক ধরনের মাথাব্যথা দেখা দিতে
পারে।
কাজেই ওষুধের
ডোজমাত্রা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চালাতে হবে।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত
থাকলে দুঃশ্চিন্তা
নিবারক ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে এবং ধ্যান
করা/মেডিটেশন
ইত্যাদি পদ্ধতিও মাইগ্রেন থেকে আরোগ্য লাভে
সাহায্য করে থাকে।
|